ভেজাল সারে কপাল পুড়ছে কৃষকের
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
০১-০৪-২০২৫ ০৮:১৬:৩৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০১-০৪-২০২৫ ০৮:১৬:৩৮ অপরাহ্ন
ছবি : সংগৃহীত
গত প্রায় ৪০ বছর ধরে কৃষিকাজ করেন ষাটোর্ধ্ব আমজাদ হোসেন। এক সপ্তাহ আগেই সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন ধানের জমিতে। কিন্তু তেমন কোনো ফলাফল না পেয়ে আবারও সপ্তাহের ব্যবধানে সার-কীটনাশক প্রয়োগ করতে হচ্ছে তাকে। কৃষক আমজাদ হোসেনের দাবি, লাইসেন্সবিহীন বিভিন্ন মুদি দোকানের ভেজালযুক্ত সার-কীটনাশক ব্যবহার করেই এমন দশা তার।
শুধু আমজাদ হোসেনের নয়, এমন অবস্থা চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল ও প্রত্যন্ত এলাকায়। বিভিন্ন মুদিখানার দোকানেই দীর্ঘদিন ধরে কোনো ধরনের অনুমোদন ও লাইসেন্স ছাড়াই খুচরা বিক্রি হচ্ছে সার-কীটনাশক। এতে ভেজালযুক্ত সার-কীটনাশক ব্যবহার করে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন কৃষকরা।
তাদের দাবি, কৃষি বিভাগের উদাসীনতা ও তদারকির অভাবে এমন যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে সার-কীটনাশক। মুদিখানার দোকান থেকে কেনা বাজারের নিম্নমানের সার-কীটনাশক ব্যবহার করে প্রতারণার শিকার হতে হচ্ছে। জমিতে সার-কীটনাশক প্রয়োগ করেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না পেয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে। তবে কৃষি বিভাগ নোটিশ দেয়ার পরেও মুদি দোকানে সার বিক্রি বন্ধ হচ্ছে না। লাইসেন্সবিহীন সার-কীটনাশক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও সচেতন মহলের।
সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় পদ্মা নদী পার হয়ে চরে কোন কৃষি কর্মকর্তা আসেন না। ধান, গম, মাষকলাই, ভুট্টায় কোন সমস্যা হলেও সমাধান নেয়ার কাউকে পাওয়া যায় না। নদীর মাঝে চর জেগে উঠায় অনুমোদনপ্রাপ্ত ডিলারের কাছ থেকে সার-কীটনাশক নেয়াও অনেক কষ্টের। কিন্তু কোন ধরনের অনুমোদন ছাড়াই এসব এলাকায় অনেকগুলো মুদি দোকানে সার-কীটনাশক বিক্রি হয়। যা সহজেই হাতের নাগালে পাওয়া যায়।
কৃষক মেহেদী হাসান জানান, চা-পান বিড়ি সিগারেটের মতোই পণ্য হিসেবে মুদি দোকান থেকে আমরা সার-কীটনাশক কিনে জমিতে প্রয়োগ করি। সমস্যা হলো এসব লাইসেন্সবিহীন ও অনুমোদনহীন সার-কীটনাশক বিক্রেতারাও যথাযথ প্রয়োগ ও সমাধান সম্পর্কে জানে না। ফলে বারবার প্রয়োগ করেও ভালো ফল পাওয়া যায় না। এতে ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয় আমাদের।
সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, মুদি দোকান ও অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানে সার-কীটনাশক বিক্রি হলেও তদারকি নেই কৃষি বিভাগের। আমরা সাধারণ কৃষক, কার লাইসেন্স আছে, কার নাই এসব দেখে সার-কীটনাশক নেয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদেরকে এসব জায়গা থেকে ভেজালযুক্ত সার-কীটনাশক কিনে ঠকতে হচ্ছে। তাই কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার।
নারায়ণপুর ইউনিয়নে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই সার-কীটনাশক বিক্রেতা বলেন, এটা ঠিক যে আমরা মুদি দোকান ও অনুমোদন প্রতিষ্ঠানে সার-কীটনাশক বিক্রি করি। কিছুদিন আগেই কৃষি বিভাগ থেকে নোটিশ দেয়া হয়েছিল। অফিসে দেখা করে আবেদন করে এসেছি। কবে পাব কি না জানি না, তবে আবারো সার-কীটনাশক বিক্রি শুরু করেছি। এই এলাকায় চাহিদা বেশি ও প্রশাসনের তদারকি কম থাকায় মুদি দোকানেও সার-কীটনাশক বিক্রি করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, আলাদাভাবে সার ও কীটনাশকের জন্য অনুমোদন ও লাইসেন্স না থাকলে তা বিক্রির কোন সুযোগ নেই। কারণ এতে কৃষকরা প্রতারণার শিকার হয় এবং সার-কীটনাশক প্রয়োগ করেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায় না। মুদি দোকানে সার-কীটনাশক বিক্রির বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। মুদি দোকানসহ লাইসেন্সবিহীন এসব প্রতিষ্ঠানে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তবুও বন্ধ না হলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাছমিনা খাতুন বলেন, অনুমোদন ও লাইসেন্স বিহীন সার-কীটনাশক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মোবাইল কোর্টে দণ্ড দেয়া হচ্ছে। আগামীতেও এমন অভিযান ও মোবাইল কোর্ট চলমান থাকবে। লাইসেন্স ছাড়া সার-কীটনাশক বিক্রি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় বিসিআইসি ১৫ জন, বিএডিসি ৮ জন ও খুচরা সার বিক্রেতা রয়েছেন ১২৪ জন। জেলায় চলতি মৌসুমে ৪৭ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ হয়েছে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স